Pages

Monday, November 4, 2013

‘মূল’কে বাদ দিয়ে মৌলবাদী- পর্ব ০৩

প্রসঙ্গ: ড. আহমদ শরীফ এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারীদের ‘নাস্তিক’ ও ‘মুরতাদ’ আখ্যা দিয়ে তাদের মৃত্যুদ- ও অন্যান্য শাস্তি দাবী।
’৯০ দশকের গোড়া থেকে মৌলবাদীদের পক্ষ থেকে যাকে ইচ্ছা ‘নাস্তিক’ আর যাকে ইচ্ছা ‘মুরতাদ’ ঘোষণা দিয়ে জাগতিক শাস্তির দাবীতে মিছিল-আন্দোলন বিশেষভাবে লক্ষণীয়। ‘নাস্তিক’ বলা হয় তাকে যিনি মহান আল্লাহ্ বা স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করেন। আর ‘মুরতাদ’ শব্দটি ‘ইরতাদ্দা’ ক্রিয়াপদ থেকে নির্গত যার অর্থ হলো, যিনি নিজে ধর্মত্যাগ করেছেন ও ধর্মত্যাগের প্রকাশ্য ঘোষণাও দিয়েছেন। এই ক্রিয়াপদটি ‘লাযেম’ অর্থাৎ যে ক্রিয়া কর্তা নিজে সম্পাদন করে। ‘মুরতাদ’ সেই ব্যক্তিকে বলা হয় যিনি নিজে তার পূর্ববর্তী ধর্ম বা মতবাদ নিজে ঘোষণা দিয়ে বর্জন করেন। অন্যের কথায় কেউ ‘মুরতাদ’ হয় না। আর একইভাবে ‘নাস্তিক’কেও একথা বলে ঘোষণা দিতে হয়, আমি কোন স্রষ্টা বা আল্লাহ্র অস্তিত্ব মানি না। এবার প্রশ্ন দাঁড়ালো, ড. আহমদ শরীফ ও তার সমমনারা কি কখনও প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, আমরা আল্লাহ্ বা স্রষ্টাকে অস্বীকার করি? যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে এ ধরণের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা সাব্যস্ত না হয়, অন্যের মুখের কথায় কেউ নাস্তিকও সাব্যস্ত হতে পারে না আর কেউ ‘মুরতাদ’ও সাব্যস্ত হতে পারে না।
দ্বিতীয় কথা হলো, আল্লাহ্র অস্তিত্বকে অস্বীকার করায় কেউ জাগতিক শাস্তিযোগ্য অপরাধীই সাব্যস্ত হয় না। আল্লাহ্র অস্তিত্বকে অস্বীকার করলে জাগতিক কোন শাস্তি দিতে হয় এমন কোন বিধান কোরআন শরীফের কোন আয়াত বা নবীজী (দ.)-এর কোন সুন্নত দ্বারা কোন মৌলবাদী হুজুর প্রমাণ করতে পারবে না। মজার ব্যাপার
হলো, ‘নাস্তিক’ শব্দের আরবী হলো, ‘দাহরিয়্যাহ্’- এ শব্দটিই কোরআনে কোথাও নেই। যে শব্দটি কোরআনে নেই তার জন্য শাস্তির বিধান প্রস্তাব করা, তা-ও আবার মৃত্যুদ-ের মত চরম প্রকারের শাস্তির প্রশ্নই উঠে না!
‘মুরতাদ’ প্রসঙ্গে এ কথা ভালভাবে মনে রাখতে হবে, কোরআন শরীফের একাধিক স্থানে ‘ইরতেদাদ’, ‘ইরতাদ্দা’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে যা ‘মুরতাদ’ শব্দের মূল ধাতু। কিন্তু কোন একটি স্থানেও ‘মুরতাদ’কে জাগতিক শাস্তি দিতে হবে- এমন কোন কথা নেই। যেসব স্থলে ‘মুরতাদ’ বা ধর্মত্যাগের বিষয়টি আলোচিত হয়েছে এমন কয়েকটি উদাহরণ দেখলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। যেমন একস্থলে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন:
...“আর তোমাদের মধ্যে যে-ই স্বীয় ধর্মত্যাগ করে ফিরে যায় এবং কাফিররূপেই মৃত্যুমুখে পতিত হয়, ইহ ও পরকালে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়। এরাই দোযখবাসী, সেখানে এরা স্থায়ী হবে।” (সূরা বাকারা: আয়াত ২১৭)
কই, এই আয়াতে ধর্মত্যাগের পর তাদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান তো দেখা গেল না!
আরেকটি স্থলে স্পষ্টভাবে মুরতাদের উল্লেখ আছে। সেখানে ধর্মত্যাগের ফলে আল্লাহ্ তায়ালা কী প্রতিক্রিয়া দেখাবেন সেটাও বলা আছে। কিন্তু এক্ষেত্রেও মৃত্যুদ-ের কোন বিধানের উল্লেখ নেই। আয়াতটি হলো,
অনুবাদ: “হে যারা ঈমান এনেছো! তোমাদের মাঝে কেউ ধর্মত্যাগ করে ফিরে গেলে নিশ্চয়ই আল্লাহ্ এমন এক সম্প্রদায় নিয়ে আসবেন যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং যারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মু’মিনদের প্রতি কোমল ও কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহ্র পথে জিহাদ করবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবে না। এটি আল্লাহ্র অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি তা দান করেন এবং আল্লাহ্ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। (সূরা মায়িদা:  আয়াত ৫৪) এই আয়াতটিতে আল্লাহ্ তায়ালা একজন অভাগা মুসলমান ধর্মত্যাগ করলে কী ফল দাঁড়ায় সে কথার উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ্ তালা বলেছেন, যদি কোন অভাগা ধর্মত্যাগ করে চলে যায় এতে মুসলমানদের কোন ক্ষতি হবে না। বরং আল্লাহ্ এই একজনের বিনিময়ে গোটা একটি জাতিকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসবেন। এবং তারা এমন হবে যাদের মাধ্যমে ইসলামের অনেক উন্নতি সাধন হবে। বুঝা গেল, একজনের ‘মুরতাদ’ হয়ায় ইসলামের লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই। সুধি পাঠক! উপরোক্ত আয়াতটি আবার পড়–ন। কেউ ‘মুরতাদ’ হলে তাকে মৃত্যুদ- দিতে হবে এমন কথা কী কোথাও এই আয়াতে দেখতে পাওয়া যায়?
এছাড়া একটি এমন আয়াতও আছে যেখানে বিষয়টি আরো খোলাসা করে বলা হয়েছে।
“নিশ্চয় যারা ঈমান আনে ও পরে কুফরী করে এবং আবার ঈমান আনে, আবার কুফরী করে, এরপর তাদের কুফরী প্রবৃত্তি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে, আল্লাহ্ তাদেরকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোন পথও দেখাবেন না। (সূরা নিসা: ১৩৭)
অতএব বুঝা গেল, কোন অভাগা ধর্মত্যাগ করলে তার প্রত্যাবর্তনের পূর্ণ সুযোগ বিদ্যমান রয়েছে। যদি মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদ-ই হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে প্রথমবার ধর্মত্যাগের সাথে সাথে তার মৃত্যুদ- হবার কথা কিন্তু আলোচ্য আয়াতে স্পষ্ট বলা আছে তারা অর্থাৎ ‘মুরতাদ’রা পুনরায় ঈমান এনেছে। তাদের জীবিত থাকা এবং পুনরায় ঈমান লাভের সুযোগ লাভ করা পরিস্কার বলে দিচ্ছে, ধর্মত্যাগের শাস্তি মৃত্যুদ- নয়। দ্বিতীয়বার ধর্মত্যাগ করার পর কুফরী প্রবণতায় ক্রমাগত হঠকারিতা দেখানো কেবল তখনই সম্ভব যখন ধর্মত্যাগ করে তারা জীবিত থাকবে। অতএব সূরা নিসার আলোচ্য আয়াতটি অর্থাৎ ১৩৭ নম্বর আয়াতটি প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদীদেরকে স্পষ্টভাবে ভ্রান্ত ও মিথ্যুক সাব্যস্ত করছে।
অতএব, কোরআন শরীফ দ্বারা স্পষ্টভাবে সাব্যস্ত হলো, ধর্মত্যাগ করার কোন জাগতিক শাস্তি নেই এর শাস্তি স্বয়ং আল্লাহ্ তায়ালা দিবেন আর সেটা দিবেন পরকালে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মৌলবাদীরা আন্দোলন করছে তারা কেউ নিজে ‘মুরতাদ’ হবার ঘোষণা দেন নি, আর কোরআন শরীফে ‘মুরতাদ’দের জাগতিক কোন শাস্তি না থাকা সত্ত্বেও হুজুরদের এক দল এদের ফাঁসি ও অন্যান্য শাস্তি দাবী করে আসছে! এদের এহেন দাবীর সাথে ইসলামের মূল ভিত্তি আল-কোরআনের, মহানবী (দ.)-এর মহান সুন্নতের এবং সহীহ হাদীসের দূরতম কোন সম্পর্ক নেই। এই মূলকে বাদ দিয়েই মৌলবাদীরা আমাদের দেশের সরলপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে আসছে।
এ কথা ঠিক, হাদীস শরীফের কোন কোন স্থানে ‘মুরতাদ’কে শাস্তি দেয়ার কথা জানা যায়। কিন্তু এ ‘মুরতাদ’ সেই ‘মুরতাদ’ নয়। এ ‘মুরতাদ’ হলো, রাষ্ট্রদ্রোহী সশস্ত্র বিদ্রোহী যাকে আরবী ভাষায় ‘হারেবী’ বলা হয়। মহানবী (দ.)-এর তিরধানের অনতিবিলম্ব পরপরই আরব উপদ্বীপের বিভিন্ন অংশে রাষ্ট্রদ্রোহিতা দেখা দেয়। রাষ্ট্রদ্রোহী এই সশস্ত্র বিদ্রোহ দমনের যেসব ঘটনা হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-এর যুগে ঘটেছে সেগুলোর মাঝে ‘মুরতাদ’কে হত্যা করার উল্লেখ পাওয়া যায়। কিন্তু এ ‘মুরতাদ’ শুধু ধর্মত্যাগকারী ‘মুরতাদ’ নয় বরং এরা ছিল মদিনা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহী দল। হ্যাঁ, একথা ঠিক. এই সশস্ত্র বিদ্রোহের প্রথম ধাপ হিসেবে তারা ইসলাম ত্যাগের ঘোষণা প্রদান করেছিল বলেই তাদেরকে ইতিহাসের পাতায় ‘মুরতাদ’ নামেই করা হয়েছে। কিন্তু কোনক্রমেই তাদেকে ধর্মত্যাগের কারণে শাস্তি প্রদান করা হয়নি। শাস্তি প্রদান করা হয়েছিল মদিনা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ করার কারণে।
বাঙালীদের কাছে বিষয়টি সহজভাবে তুলে ধরার জন্য এদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটের দুটি উদাহরণ তুলে ধরা হচ্ছে, একটি হচ্ছে ‘সর্বহারা’দের উদাহরণ আর অপরটি হলো পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির উদাহরণ। আমরা প্রায় প্রতিদিন সংবাদে দেখতে পাই, ওমুক জেলায় ওমুক স্থানে ‘সর্বহারা’দের দমন করতে গিয়ে এতজন পুলিশ আহত এবং এতজন ‘সর্বহারা’ নিহত। বলা বাহুল্য, সহায় সম্বলহীন হবার কারণে তথা সর্বস্ব হারানোর কারণে এসব ‘সর্বহারা’দের হত্যা করা হয় না বরং সশস্ত্র বিদ্রোহ ও রাষ্ট্রদ্রোহী হবার কারণে তাদেরকে হত্যাযোগ্য অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হয়। একইভাবে কমিউনিস্ট মতাবলম্বি হওয়া হত্যাযোগ্য কোন অপরাধ নয়। কিন্তু আমরা অহরহ পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সাথে লড়াইয়ের সংবাদ পাই। এক্ষেত্রেও কমিউনিস্ট হবার কারণে তাদেরকে হত্যা করা হয় না বরং সুপ্রতিষ্ঠিত সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের কারণে এবং সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টির অপরাধে তাদেরকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়। ঠিক একইভাবে খিলাফতে রাশেদার প্রাথমিক যুগে যেসব স্থানে ‘মুরতাদ’দের হত্যা করার ঘটনা জানা যায় সেগুলো তাদের ‘মুরতাদ’ হবার জন্য নয় বরং এর অন্তর্নিহিত কারণ হলো, এরা ধর্ম ত্যাগের ছদ্মাবরণে মদিনা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ করেছিল। ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ’ অতীতকালের মত বর্তমান আধুনিক যুগেও হত্যাযোগ্য অপরাধ। সরকার ও প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার খাতিরে এবং জনগণের সহায়-সম্পত্তি রক্ষার্থে সশস্ত্র রাষ্ট্রদ্রোহীর বিরুদ্ধে যে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু তাই বলে ধর্মত্যাগ করার কারণে কাউকে মাহনবী (দ.) বা খোলাফায়ে রাশেদীন নিছক ধর্মত্যাগের কারণে জাগতিক কোন শাস্তি দেন নি।
ধর্মত্যাগ করার অপরাধে জাগতিক কোন শাস্তির বিধান যে ইসলামে নেই এ বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য এবার রসূলুল্লাহ্ (দ.)-এর জীবনাচরণ থেকে কয়েকটি উদাহরণ উপস্থাপন করা হচ্ছে- ১। একদা একজন আরব বেদ্ঈুন মদীনায় এসে মুসলমান হবার পর জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। সে এটিকে ইসলাম গ্রহণের কুফল বলে মনে করে এবং প্রকাশ্যে ইসলাম ত্যাগের ঘোষণা দিয়ে মহানবী (দ.)-এর চোখের সামনে মদীনা শরীফ ত্যাগ করে। রসূলুল্লাহ্ (দ.) তাকে যেতে বাধাও দেন নি অথবা তাকে হত্যাযোগ্য অপরাধীও সাব্যস্ত করেন নি।(বুখারী কিতাবুল হাজ্জ, বাব-আল্ মাদীনাতু তানফীল খুবুস)। যদি ধর্মত্যাগের শাস্তি মৃত্যুদ- আল্লাহ্র পক্ষ থেকে নির্ধারিত হতো তাহলে রসূলুল্লাহ্ (দ.) কখনও তাকে শাস্তি না দিয়ে ছাড়তেন না। বুখারী শরীফে সংকলিত এই হাদিসটি উগ্র মৌলবাদী চক্রের মিথ্যাচারিতা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করছে। যে শাস্তি আল্লাহ্ নির্ধারণ করেন নি, যে শাস্তি রসূলুল্লাহ্ (দ.) প্রদান করেন নি সেই বিধান নায়েবে রসূল হিসাবে রসূল হিসাবে দাবী করে হুজুররা যে আসলেই মূলকে বাদ দিয়ে মৌলবাদী তা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করছে।
২। হুদায়বিয়ার সন্ধিতে নবীজী (দ.) এই মর্মে চুক্তি বদ্ধ হয়েছিলেন, “মক্কাবাসীর কেউ যদি তার অভিভাবকের অনুমতি ব্যতিরেকে হজরত মুহাম্মদ (দ.)-এর নিকট মদীনায় চলে যায়, তাহলে তাকে তার অভিভাবকের নিকট মক্কায় ফেরত পাঠাতে হবে। তবে কোনও মুসলমান মদিনা ত্যাগ করে কুরায়শদের নিকট মক্কায় চলে গেলে মক্কাবাসী কাফেররা তাকে ফেরত দিবে না।’ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত ‘ইসলামী বিশ্বকোষ’, ২০শ খন্ড, পৃষ্ঠা ৬৯৯, এপ্রিল ১৯৯৬ সনে মুদ্রিত)। বলা বাহুল্য, সেময় একজন মুসলমান নবীজী (দ.) ও সাহাবীদের সঙ্গ ছেড়ে কেবল তখনই মক্কার কাফেরদের কাছে আশ্রয় নিতে পারতো যখন সে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে ‘মুরতাদ’ হয়ে যেত। মুরতাদের শাস্তি যদি উগ্র ধর্মান্ধদের দাবী অনুযায়ী মৃত্যুদ-ই হয়ে থাকে তাহলে রসূলুল্লাহ (দ)এমন শরীয়ত বিরোধী চুক্তি কখনই করতেন না। তিনি অবশ্যই ধর্মত্যাগীদের শাস্তি দিতেনই দিতেন। ৩। আবদু বিন সাদ বিন আবি সারাহ্ নামক এক সাহাবী কোরআনের ওহী সংরক্ষণের কাজে লিপিকারের দায়িত্ পালন করতেন। তিনি কেবল ধর্মত্যাগ করে ‘মুরতাদ’ই হন নি বরং মদিনা ছেড়ে মক্কায় গিয়ে সশস্ত্র আগ্রাসীদের দলে যোগ দেন। মক্কা বিজয়ের দিন তাকে অন্যান্য হত্যাযোগ্য অপরাধীর মত তাকেও সাধারণ ক্ষমার আওতা বহির্ভূত রাখা হয়। পরবর্তীতে এই অপরাধী হজরত উসমানের (রা.) কাছে আশ্রয় নেয়। তার অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাওয়ার কারণে এবং হজরত উসমানের সুপারিশে মহানবী (দ.) তাকে ক্ষমা করে দেন। কেবল তাই নয়, পরবর্তীতে এই ‘সাবেক মুরতাদ’ খলীফার পক্ষ থেকে মিশরের গভর্ণরের দায়িত্বও পালন করেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক অনুদিত সীরাতুন নবী-ইবনে হিশাম ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা ৬৪, ৬৫)
লক্ষ্য করুন, কোন একটি ক্ষেত্রেও হুজুর (দ.) প্রকাশ্য ধর্মত্যাগীকে মৃত্যুদ- তো দূরের কথা জাগতিক কোন শাস্তি দেন নি। অধুনা মৌলবাদী হুজুররা মহানবী (দ.)-এর চেয়ে বেশী মুত্তাকী মুসলমান নন। বরং এদের উচিত রসূল (দ.)-এর আদর্শ থেকে ইসলাম শেখা। তা না করে তারা মহানবী (দ.)-এর শিক্ষা বিরোধী দাবী-দাওয়া নিয়ে মাঠে নেমেছে যেগুলোর সাথে মহানবী (দ.)-এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামের দূরতম কোন সম্পর্ক নেই। অতএব যারা মূলকে বাদ দিয়ে মৌলবাদী সেজেছে তাদের ব্যাপারে সাবধান।


No comments:

Post a Comment